ইসতিয়াক আহমেদ নাবীল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেঘালয়ের কোলঘেঁষা,বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী ছোট্ট জেলা শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চার শতাধিক বছরের পুরনো মোঘল স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শন ‘ঘাঘড়া লস্কর খানবাড়ি জামে মসজিদ’।
মুসলিম স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন এই ঐতিহাসিক ‘লস্কর খানবাড়ি’ মসজিদটি ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘাঘড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তনে মসজিদটির নাম ঘাঘড়া লস্কর খান মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।মসজিদের গায়ে থাকা নিদর্শন অনুসারে ধারণা করা হয়,বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়।আজিমোল্লাহ খান সেটি নির্মাণ করেন।
মসজিদটির দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় হিজরি ১০২৮ বা ইংরেজি ১৬০৮ লেখা রয়েছে। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য।মসজিদের ভিতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান রয়েছে। মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩০ ফুট করে। মাঝখানে গম্বুজ ও ছোট-বড় ১০টি মিনার রয়েছে।পূর্বদিকে একটি দরজা রয়েছে। ভিতরে মেহরাব ও দেয়ালে বিভিন্ন রঙের ও কারুকার্য করা ফুল ও ফুলদানি আঁকা আছে। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনী চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা,যার প্রস্থ ৪ ফুট।
মুসল্লীদের অযু করার জন্যে মসজিদের পাশেই মাঠের মাঝে রয়েছে একটি টিউবওয়েল। এখানে অযুখানার ব্যবস্থা না থাকার জন্যে, মুসল্লীদের খানিকটা ভোগান্তির স্বীকারও হতে হয়।
মসজিদটির মোট জমি ৫৮ শতাংশ। মসজিদের মূল ভবন ও বারান্দা মিলে ১৭ শতাংশ এবং বাকি ৪১ শতাংশ জায়গায় রয়েছে কবরস্থান।
মসজিদের এই জমি- তৎকালীন খান বাড়ির লোকজন ও গ্রামের অনেকে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়েছে।
বাইরে থেকে মসজিদটি বিশাল আকৃতির দেখা গেলেও ভেতরে খুব বেশি বড় নয়। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসজিদের ভেতরে ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১০ জন করে ৩০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারে।
মসজিদটি শেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এরপরে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের সংস্কার ও রঙের কাজ করা হয়েছে। মসজিদটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা ছুটে আসে এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী দেখতে ও নামাজ আদায়ের জন্যে। এর স্থাপত্যশৈলী যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভ্রমণপিয়াসীদের দাবি, মোঘল আমলের এই মসজিদটির যাবতীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ যেন যথাযথভাবে করা হয়।
Leave a Reply