কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি:

দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর গত বুধবার (২১ মে, ২০২৫) রাত ১১টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন কালিয়াকৈরের প্রখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক রাজনীতিবিদ এবং অসংখ্য জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার আব্দুস সালাম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে কালিয়াকৈরসহ সমগ্র গাজীপুরে এক অপূরণীয় শূন্যতা নেমে এসেছে। কালিয়াকৈরজুড়ে এখন শোকের মাতম।
এক নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী
খন্দকার আব্দুস সালাম কেবল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক অসাধারণ সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। এলাকায় তিনি “দানবীর” হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তার দানশীলতা ও জনহিতকর কাজ তাকে গণমানুষের কাছে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন বেগম সুফিয়া মডেল হাই স্কুল, আজও এলাকার শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক
খন্দকার আব্দুস সালাম ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় সৈনিক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার আত্মত্যাগ ও অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। বীরত্বের সাথে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার দেশপ্রেম এবং আত্মোৎসর্গ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
রাজনৈতিক অঙ্গনেও খন্দকার আব্দুস সালামের ছিল এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল সক্রিয় ছিলেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কালিয়াকৈরের উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। মানুষের সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে দাঁড়ানো এবং তার সোজাসাপ্টা ও স্পষ্টবাদী মনোভাব তাকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলেছিল। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ এবং একসময় জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে ফেরা তার কর্মজীবনের বৈচিত্র্য প্রমাণ করে। তার মৃত্যুতে স্থানীয় রাজনীতিতে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও শোক
বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুস সালামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোঃ হুমায়ুন কবির খান। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
জানাজা নামাজে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। খন্দকার আব্দুস সালামের কর্মময় জীবন এবং তার অসামান্য অবদান কালিয়াকৈরবাসীর মনে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। তার আদর্শ ও জনহিতকর কাজ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।