আল আমিন সরদার পাটকেলঘাটা সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ভূমি অফিসসহ ১২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে প্রতিনিয়ত অনিয়ম-দুর্নীতিতে লুটপাট চলছে এমন গুঞ্জন নতুন নয়। এসকল ভূমি অফিস গুলোতে নানা ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ থাকলেও এখানে দেখার যেন কেউ নেই। তাছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে গিয়েও টাকার অভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে অসংখ্য সেবা গ্রহীতরা এমন অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে প্রথমে পাটকেলঘাটা,ইসলামকাটি, ও নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে টার্গেট করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা। সরজমিনে প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গ্রাহক সেজে অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসে পাটকেলঘাটা, ইসলামকাটি, নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মিউটেশন বানিজ্যের রহস্য। সেখানে প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব নাম পত্তন বাবদ এক হাজার,অফিস সহকারী এক হাজার,সার্বিয়ার দুইশত,নাজির তপন কুমার এক হাজার,জারিকারক দুইশত, এমনকি ঝাড়ুদার পর্যন্ত সরজমিনে জিজ্ঞাসা করে দেখা যায় ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যে যুক্ত থেকে তারা অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে গ্রাহক হয়রানি সহ একাধিক দূর্নীতিতে জড়িত রয়েছে। প্রতিটি ভূমি অফিসে প্রকাশ্যে চুক্তিতে মিউটেশন ও নাম সংশোধন করার নামে অফিস স্টাফসহ দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ চাওয়া হচ্ছে। এমনকি সরকারি ভূমি অফিসের মধ্যে দালালদের প্রভাব দেখা গেছে। যে কাজ অফিস স্টাফের দ্বারা সম্ভব নয় সে কাজ টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে করা হচ্ছে অতি সহজেই। এমন একাধিক স্টাফ ও সেবা গ্রহীতাদের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা। অতঃপর সাংবাদিক পরিচয়ে সকলের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসতে থাকে নামপত্তন বানিজ্যে মূল রহস্য। অফিস স্টাফদের মাধ্যমে জানা যায়, প্রতি মিউটেশনে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে বাধ্যতামূলক দিতে হয় ৩৫০০ টাকা,
ভুক্তভোগীরা জানান, মিউটেশন বাণিজ্যের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। টাকা ছাড়া কোনো কাজ-ই যেন করা হচ্ছে না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে এমনকি এসিল্যান্ড অফিসেও কম টাকা দিলে দীর্ঘদিন ঘুরতে হচ্ছে। সেখানে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দেয়ার পরও কাজ হচ্ছে না। নামজারি, খারিজ,খাজনা প্রদানসহ অন্যান্য কাজে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসেও বর্তমানে প্রকাশ্যে ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে এমন সংবাদ পেয়ে সরজমিনে গেলে তালা উপজেলা ভূমি অফিসেই একাধিক সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একই বক্তব্য পাওয়া যায়।
একাধিক দালাল চক্র অফিস স্টাফদের সাথে কাজের দরকষাকষি করতেও দেখা যায়। দালাল চক্র তাদের মিউটেশন বানিজ্যের কাজ শেষ করে ফেরার পথে পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় কয়েকজন দালালের সাথে। তারা বলেন, তালা উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির কাম ক্যাশিয়ার তপন কুমার সহ কয়েকটি দালাল চক্র মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করে আসছে। এই সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে মিস কেস, নামজারী কেস করে নিজস্ব দালালের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কোন ফাইল বা কোন কেসে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে তাও পূর্বের নিধারণ করে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট। প্রতিটি নামজারি করতে আসা ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা সামান্য ত্রুটি থাকলে ১৫,২০ এমনকি ৩০ হাজার টাকা দেয়া লাগে।দাবিকৃত টাকা কেউ না দিলে তার ওই নামজারি বাতিল করে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে নাজির তপন কুমার এর বিরুদ্ধে। ভূমি সংশ্লিষ্ট সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে এই ভূমি অফিসগুলো। তাদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমি মালিক ও অংশীদারসহ সেবাগ্রহীতারা। কেউ এসিল্যান্ডের নাজির তপন কুমারের ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার জানালে তার নামজারি নথি ও মিস কেসের ফাইল আটকে রাখা হয় দীর্ঘদিন। অন্যদিকে অবৈধ দখল দেয়া প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে জমির প্রকৃত মালিক মিস কেস করে ঘুষ না দিলেই পড়েন মহাবিপদে। ঘুষের নির্ধারিত টাকার কম দিলেও ভুক্তভোগীদের এসিল্যান্ডের নাজির তপন কুমারের অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।সম্প্রতি ইসলামকাটি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে সাতটি নামপত্তন বাবদ সাত হাজার টাকা নেওয়ার ও অভিযোগ উঠেছে।ডিসিয়ার ও খাস খতিয়ারের জমি পাইয়ে দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
এ ব্যাপারে নাজির তপন কুমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আসেন একসাথে বসে মিষ্টি খাই তালায় প্রতিটা সাংবাদিকের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে বলে ফোন কেটে দেয়
এ বিষয়ে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃমাছুদুর রহমান কে প্রথমে মুঠোফোনে জানানোর চেষ্টা করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননাই পরবর্তী বন্ধ পাওয়া যায়। সংক্রান্ত বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃরাসেল সাহেব মুঠোফোনে বলেন,আমি উক্ত বিষয় সম্পর্কে আগে পরে অবগত নই। খোঁজ নিচ্ছি কোন দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব। ঘুষ বাণিজ্যে যুক্ত থাকা সকলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি জানিয়েছেন অত্র অঞ্চল তালা উপজেলার সাধারণ মানুষ।