নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার কলেমেশ্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বাধা-নির্যাতন ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া মোঃ রায়হান আলী(১৮) হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোঃ জহির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থী ও নিহতের পরিবার। গত বছরের ১১ অক্টোবর ছেলে রায়হান আলী হত্যার ঘটনায় বাবা মামুন সরদার বাদী হয়ে জিএমপি’র গাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে জহির গাছা থানার হত্যা মামলায় ১০৮ নং আসামী। মামলা নং-০৫, তারিখ ১১/১০/২৪। সে মহানগরের ছয়দানা মালেকের বাড়ি এলাকার বাসিন্দা হাজী আব্দুস সামাদের ছেলে। জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের আর্শীবাদপুষ্ট ছিলেন জহির। স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের আমলে জাহাঙ্গীরের মদদে নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন। হত্যা মামলায় বাকি আসামিরা পলাতক থাকলেও জহিরের চলাফেরা এখনো ওপেন সিক্রেট। হত্যা মামলার মূল কাগজপত্র প্রমাণাদি ইতোমধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।
মামলার এজাহারে নিহতের পিতা মামুন সরদার উল্লেখ করেন, গত বছরের ২০ জুলাই মহানগরের বোর্ডবাজার কলেমেশ্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে-মিছিলে অংশগ্রহণ করেন রায়হান আলী। এসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা ছাত্রদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, হকিস্টিক, চাইনিজ কুড়ালসহ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। সে সময় মাথার পিছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে রায়হান আলী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এদিকে এলাকাবাসী জানান, জহিরের বাবা হাজী আব্দুস সামাদ গাজীপুর মহানগর বিএনপি সাবেক নেতা হওয়ায় সে এমনভাবে বীরদর্পে চলাফেরা করছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, বিগত স্বৈরাচার শাসনে জাহাঙ্গীরের মদদে জহিরের হাতে চরম দমনপীড়নের শিকার হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ মদদপুষ্ট হয়ে ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর চালিয়েছেন অমানবিক নির্যাতন। জহিরের ভয়ে অনেকেই বছরের পর বছর বাড়ি ঘর পরিবার পরিজন ছাড়া আত্মগোপনে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের। অভিযোগ রয়েছে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের মদদে এই জহির তৎকালীন বিএনপির সমাবেশে হামলায় প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
অন্যদিকে আসামী জহির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন খবরে হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে রায়হান আলীর স্বজনরা। হত্যাকা-ের ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মামলাটির কোনো অগ্রগতি নেই। বাদীর অভিযোগ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না। এমন নৃশংস হত্যাকা-ের আসামী জহিরসহ পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদ এ প্রতিকেদকে বলেন, আগে আমি মামলার কাগজপত্র দেখি, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।